স্বদেশ ডেস্ক: মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিজনের বিজয়ী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। ১৮ পেরিয়ে সবে ১৯ বছরে পা দিয়েছেন। এখনো চেহারা থেকে টিনএজের ছাপ যায়নি। কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব, ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা বা সমাজ সচেতনতা সবাইকে মুগ্ধ করে। তাইতো অল্প সময়ের মধ্যে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ঐশী ইতিমধ্যে ‘মিশন এক্সট্রিম’ নামের বড় বাজেটের তারকাবহুল সিনেমার শ্যুটিং শেষ করেছেন। এটি এ বছরই মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু ডাবিং ও পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শেষ না হওয়ায় এ বছর দেখা যাবে না সিনেমাটি। এই সিনেমার পরে ‘আদম’ নামের আরও একটি সিনেমার প্রথম ধাপের শ্যুটিং করেছেন ঐশী। এখানে তিনি একেবারেই গ্রামের একজন গ্ল্যামারবিহীন নারী চরিত্র করছেন। আর বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্বপ্নবাজী’তে তাকে একজন গ্ল্যামারাস মডেল চরিত্রে দেখা যেত, কিন্তু তিনি সিনেমাটি করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিনেমায় তার চরিত্রে ছিল ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, আবেদনময়ী পোশাক ও ধূমপানের দৃশ্য। যা এই মুহূর্তে করার জন্য ঐশী প্রস্তুত নন বলেই সিনেমা থেকে তিনি সরে গেছেন। ঐশী বলেন, ‘প্রতিটি বয়সের একটি আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। আমার এখন যে বয়স তাতে এ ধরনের একটি চরিত্র না করলেই ভালো হয় বলে মনে হয়েছে। এজন্য আমি পরিচালক রায়হান রাফিকে আমার অপারগতার কথা জানাই। তিনি আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাই মিউচুয়ালি আমি সিনেমাটি থেকে সরে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমি চরিত্র করতামও তাহলে তা আমার ও এই সিনেমার জন্য ভালো কিছু হতো বলে মনে হয় না। আমি একজন ডিরেক্টরস আর্টিস্ট হতে চাই। কিন্তু যখন আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে আমাকে কিছু করতে বলা হতো তখন হয়তো পরিচালকের সঙ্গে মতভেদ তৈরি হতো। এ জন্যই আগেভাগে আমি সিনেমাটি থেকে সরে গেছি। আমি চাই একটি ভালো প্রজেক্ট আমার জন্য যাতে খারাপ না হয়।’
ঐশী এখন পড়াশুনায় মন দিয়েছেন। তিনি পড়াশুনা করছেন আইইউবিতে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে। এই বিষয়টি শোবিজের কাজের থেকে একেবারেই আলাদা। কেমন উপভোগ করছেন পড়াশুনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেমন উপভোগ করছি, তা বলার আগে আরেকটি কথা বলতে চাই। আমার সম্পর্কে একটা ভুল তথ্য জানেন অনেকেই। তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমি ঢাকায় এসেছিলাম। তারপর মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে নাম লেখাই। কিন্তু আসল ঘটনা আলাদা। আমি বিদেশে পড়াশুনা করতে যাওয়ার জন্য ঢাকায় আইইএলটিএস করতে এসেছিলাম। প্রকৃতি আমাকে ছোটবেলা থেকেই টানে। ইচ্ছা ছিল বিদেশে সয়েল সায়েন্স নিয়ে পড়ার। কিন্তু সেটা তো আর হলো না। তাই দেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে দেখলাম সয়েল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনার খুব বেশি স্কোপ নেই। তাই এর কাছাকাছি বিষয় এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে পড়াশুনা করছি। এটা সত্যি উপভোগ করছি।’
পড়াশুনাকে ভবিষ্যতে কীভাবে কাজে লাগাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বিবিএ, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাম তাহলে আমাকে নির্দিষ্ট পেশার দিকে ঝুঁকতে হতো। কিন্তু পরিবেশ নিয়ে পড়াশুনার পর কাজের জায়গা অনেক বিস্তৃত। তাছাড়া এখন বিশে^র প্রাকৃতিক যে সংকট, তাতে এ নিয়ে মানুষের জানার আছে অনেক। আমি শোবিজের কাজের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চাই।’ ঐশী আরও বলেন, ‘আমি তো মিস ওয়ার্ল্ড প্ল্যাটফর্ম থেকে এসেছি। সেখানকার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। আমি সে কাজটি করতে পারব। আমি বাংলাদেশের প্রথম, যে মিস ওয়ার্ল্ডের ফাইনালিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। এজন্যই মানুষ আমাকে নিয়ে গর্ব করে। এর আগে এসব সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা থাকলেও আমি প্রমাণ করতে পেরেছি যে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা যায়। এজন্য অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় পাঠাচ্ছেন। আমার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের পথচলা অনেকটাই মসৃণ হয়েছে। এই বিষয়গুলো ব্যক্তি ঐশীকে গর্বিত করে, একই সঙ্গে দায়িত্ব সচেতন করে।’